মোজার উপর মাসাহ্‌
ফিকহ নোট
1

মোজার উপর মাসাহ্‌

চামড়া বা কাপড়ের (সুতি বা নাইলনের) মোজার উপর মাসাহ্‌ বহু সংখ্যক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সাহাবী জারীর (রাঃ) (যিনি ওযুর আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি) বলেন, ‘আমি দেখেছি, আল্লাহর রসূল (ﷺ) পেশাব করার পর ওযু করলেন এবং নিজের (চামড়ার) মোজার উপর মাসাহ্‌ করলেন।’ (মুসলিম, সহীহ ২৭২নং)

মুগীরাহ্‌ বিন শো’বাহ্‌ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) ওযুর পর (সুতির) মোজা ও জুতোর উপর মাসাহ্‌ করেছেন। (আবূদাঊদ, সুনান ১৫৯, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, তিরমিযী, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ৫২৩নং)

রেফারেন্সগুলো লেখার মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত আছে।
মাসাহ্‌র শর্তাবলী
ফিকহ নোট
শর্ত

মাসাহ্‌র শর্তাবলী

এই মাসাহ্‌র জন্য ৪টি শর্ত রয়েছে:

  • ১- পা ধুয়ে পূর্ণরুপে ওযু করার পর মোজা পরতে হবে। পূর্বে ওযু না করে মোজা পরে, তারপর তার উপর মাসাহ্‌ চলবে না।
    সাহাবী মুগীরাহ্‌ (রাঃ) বলেন, আমি নবী (ﷺ) এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। তিনি ওযু করছিলেন। আমি তাঁর মোজা দু’টি খুলে নিতে ঝুঁকলাম। তিনি বললেন, “ছাড়ো, আমি ও দু’টিকে ওযু অবস্থায় পরেছি।” (বুখারী ২০৬, মুসলিম, সহীহ ২৭৪নং)
  • ২- মোজা দু’টি যেন পবিত্র হয়। অর্থাৎ, তাতে যেন কোন প্রকারের নাপাকী লেগে না থাকে।
  • ৩- এই মাসাহ্‌ যেন সেই পবিত্রতা অর্জনের সময় হয়, যার জন্য কেবল ওযু জরুরী হয়। কারণ, যার জন্য গোসল জরুরী হয়, সেই সময় মোজা খুলে দিয়ে পা ধোওয়া জরুরী। (তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, মিশকাত ৫২০নং)
  • ৪- মাসাহ্‌ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হয়। (ফাতাওয়া ফিল মাসহি আলাল খুফফাইন, ইবনে উসাইমীন ৩নং)
রেফারেন্স: বুখারী ২০৬, মুসলিম ২৭৪, তিরমিযী, নাসাঈ, আহমাদ, ইবনে খুযাইমাহ্‌, ফাতাওয়া ফিল মাসহি আলাল খুফফাইন
মাসাহ্‌র সময়কাল
ফিকহ নোট
সময়

মাসাহ্‌র সময়কাল

হযরত আলী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) মুসাফিরের জন্য ৩ দিন এবং গৃহ্‌বাসীর জন্য ১ দিন মোজার উপর মাসাহ্‌র সময়-সীমা নির্ধারিত করেছেন। (মুসলিম, সহীহ ২৭৬)

এই নির্দিষ্ট সময় শুরু হবে, ওযু করে মোজা পরে ঐ ওযু ভাঙ্গলে তার পরের ওযু করার সময় তার উপর মাসাহ্‌ করার পর থেকে।

অতএব প্রথম মাসাহ্‌ থেকে ২৪ ঘন্টা গৃহ্‌বাসীর জন্য এবং ৭২ ঘন্টা মুসাফিরের জন্য মাসাহ্‌ করা বৈধ হবে।

উদাহরণ: যদি কেউ মঙ্গলবারের ফজরের নামাযের জন্য ওযু করার সময় মোজা পরে, তারপর ঐ ওযুতে চার ওয়াক্ত নামায পড়ে এশার পর ওযু ভাঙ্গে এবং বুধবার ফজরের পূর্বে ওযু করার সময় মাসাহ্‌ করে, তাহলে—
➡️ সে গৃহবাসী হলে বৃহস্পতি ফজর পর্যন্ত মাসাহ্‌ করতে পারবে। ➡️ আর যদি মুসাফির হয়, তবে শনিবার ফজর পর্যন্ত মাসাহ্‌ করতে পারবে।

রেফারেন্স: ফাতাওয়া ফিল মাসহি আলাল খুফফাইন, ইবনে উসাইমীন (৮-৯পৃ:)
মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১/২৩৬
মাসাহ্‌র নিয়ম
ফিকহ নোট
নিয়ম

মাসাহ্‌র নিয়ম

দু’টি হাত ভিজিয়ে ডানহাতের আঙ্গুলগুলো ডান পায়ের আঙ্গুলের উপর থেকে শুরু করে পায়ের পাতার উপর দিয়ে পায়ের রলার শুরু পর্যন্ত মাসাহ্‌ করতে হবে। আর একই সাথে বামহাতের আঙ্গুল দিয়ে বাম পায়ের উপর মাসাহ্‌ করতে হবে।

উভয় কানের মাসাহ্‌ যেমন একই সঙ্গে হয়, ঠিক তেমনিই উভয় পায়ের মাসাহ্‌ একই সঙ্গে হবে। পৃথকভাবে প্রথমে ডান পা, পরে বাম পা মাসাহ্‌ করা সঠিক নয়।

পায়ের তেলোতে ধুলো-বালি থাকলেও তার নিচে মাসাহ্‌ করা বিধেয় নয়।

হযরত আলী (রাঃ) বলেন, “দ্বীনে যদি রায় ও বিবেকের স্থান থাকত, তাহলে মোজার উপরের অংশ অপেক্ষা নিচের অংশই অধিক মাসাহ্‌যোগ্য হত। কিন্তু আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ)-কে তাঁর মোজার উপরের অংশে মাসাহ্‌ করতে দেখেছি।”

রেফারেন্স:
ফাতাওয়া ফিল মাসহি আলাল খুফফাইন, ইবনে উসাইমীন ১৩নং
আবূদাঊদ, সুনান; দারেমী, সুনান; আহমাদ, মুসনাদ; মিশকাত ৫২৫নং
মাসাহ্‌ নষ্ট হয় কিসে?
ফিকহ নোট
নষ্ট

মাসাহ্‌ নষ্ট হয় কিসে?

মাসাহ্‌ কয়েকটি কারণে নষ্ট হয়ে যায়। সেগুলো হলো:

  • সময়ের সীমা পার হয়ে গেলে — গৃহবাসীর জন্য ২৪ ঘন্টা এবং মুসাফিরের জন্য ৭২ ঘন্টা অতিক্রম করলে।
  • গোসল ফরয হলে — যেমন, জানাবত বা হায়েজ-নিফাসের কারণে গোসল আবশ্যক হলে।
  • মোজা খুলে ফেললে — মাসাহ্‌ করার পর মোজা খুলে ফেললে মাসাহ্‌ ভেঙে যায়।
মোজার উপর মাসাহ্‌র আনুষঙ্গিক মাসায়েল
ফিকহ নোট
মাসায়েল

মোজার উপর মাসাহ্‌র আনুষঙ্গিক মাসায়েল

  • শীত-গ্রীষ্ম যে কোনো সময় মোজা পরে থাকলে তার উপর মাসাহ্‌ বৈধ।
  • একেবারে পাতলা (যাতে পা দেখা যায়) মোজা হলে তাতে মাসাহ্‌ চলবে না।
  • উত্তম হলো উভয় পা ধুয়ে তারপর মোজা পরা।
  • মোজা পরার সময় নির্দিষ্ট নিয়ত করা জরুরি নয়।
  • ওযুর পর মোজা পরলে তাতে মাসাহ্‌ করা যায়, তায়াম্মুম করলে যায় না।
  • মুসাফির ৩ দিন ৩ রাত এবং গৃহবাসী ১ দিন ১ রাত মাসাহ্‌ করতে পারে।
  • মাসাহ্‌র নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলে মাসাহ্‌ করে নামায হবে না।
  • ওযু না ভেঙে মোজা খুলে আবার পরে নিলে মাসাহ্‌ চলবে, কিন্তু একবার মাসাহ্‌ করার পর খুলে ফেললে পুনরায় মাসাহ্‌ হবে না।
  • ডবল মোজা বা জুতোর উপরও মাসাহ্‌ করা বৈধ।
  • মহিলারাও পুরুষদের মতই মাসাহ্‌ করবে।
  • অধিকাংশ পা যদি বের হয়ে যায় তবে মাসাহ্‌ বৈধ হবে না।
  • মাসাহ্‌ করার পর মোজা খুললে ওযু নষ্ট হয় না, তবে আবার মোজা পরে মাসাহ্‌ করা বৈধ নয়।
  • ফাটা বা ছেঁড়া মোজার উপরেও মাসাহ্‌ চলবে, তবে অধিকাংশ পা বেরিয়ে থাকলে নয়।
  • ওযু না করে মোজা পরে মাসাহ্‌ করলে নামায হবে না।
তায়াম্মুম
ফিকহ নোট
তেইয়ামُم

তায়াম্মুম

তায়াম্মুমের নির্দেশ খোদ আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। তিনি বলেন,

وَإِنْ كُنْتُمْ مَّرْضَى أَوْ عَلى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَاءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْداً طَيِّباً فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ مِّنْهُ

অর্থাৎ, যদি তোমরা অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক, কিংবা তোমাদের মধ্যে কেউপায়খানা করে আসে অথবা তোমরা স্ত্রী-সঙ্গম কর, অতঃপর পানি না পাও, তাহলে পাক মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও; তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতকে মাটি দ্বারা মাসাহ্‌ কর---। (কুরআন মাজীদ ৫/৬)

সরল ও সহ্‌জ দ্বীনের নবী (ﷺ) বলেন, “সকল মানুষ (উম্মতের) উপর আমাদেরকে ৩টি বিষয়ের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে; আমাদের কাতারকে করা হয়েছে ফিরিশ্‌তাবর্গের কাতারের মত, সারা পৃথিবীকে আমাদের জন্য মসজিদ করে দেওয়া হয়েছে এবং পানি না পাওয়া গেলে মাটিকে আমাদের জন্য পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ করা হয়েছে। (মুসলিম, মিশকাত ৫২৬নং)

তায়াম্মুম বৈধ হওয়ার অবস্থা
ফিকহ নোট
তেইয়ামُم

কোন কোন অবস্থায় তায়াম্মুম বৈধ?

  1. পানি একেবারেই না পাওয়া গেলে অথবা পান করার মত থাকলেও ওযু বা গোসলের জন্য যথেষ্ট পানি না থাকলে।
    হাদীস: বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৫২৭নং
  2. অসুস্থ অবস্থায়, যদি পানি ব্যবহার করলে ক্ষত বা ঘা বেড়ে যাওয়ার বা আরোগ্য বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
    হাদীস: আবূদাঊদ ৩২৫, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ৫৩১নং
  3. পানি অত্যন্ত ঠান্ডা হলে, এবং গোসল/ওযু করলে অসুস্থ হওয়ার ভয় থাকলেও পানি গরম করার সুযোগ না থাকলে।
    হাদীস: বুখারী, আবূদাঊদ ৩২৩
  4. পানি পাওয়া গেলেও, তা আনতে গেলে প্রাণ, সম্পদ বা ইজ্জতের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে; অথবা বন্দী অবস্থায় পানি ব্যবহার সম্ভব না হলে।
  5. পানি কাছে থাকলেও, তা যদি পান করা, রান্না ইত্যাদির জন্য প্রয়োজন হয়— তখন ওযু/গোসলের জন্য তায়াম্মুম বৈধ।
    মুগনী, ফিকহুস সুন্নাহ্‌
কিসে তায়াম্মুম হবে
ফিকহ নোট

কিসে তায়াম্মুম হবে?

  • পবিত্র মাটি – সবচেয়ে মৌলিক উপাদান।
  • পাথর – ধুলাযুক্ত অথবা ধুলাহীন।
  • বালি – সমুদ্র/মরুভূমির বালিও বৈধ।
  • কাঁকর বা কঙ্কর।
  • সিমেন্ট/পাথরজাত বস্তু – ধুলোবিহীন হলেও বৈধ।

📖 ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২১৮

তায়াম্মুম করার পদ্ধতি
ফিকহ গাইড

তায়াম্মুম করার পদ্ধতি

  1. নিয়ত করবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
  2. বিসমিল্লাহ্‌’ বলবে।
  3. দুই হাতের চেটো মাটির উপর মারবে
  4. হাত তুলে নিয়ে তাতে ফুঁ দিয়ে অতিরিক্ত ধুলো ঝেড়ে ফেলবে
  5. এরপর উভয় হাত দ্বারা মুখমণ্ডল মাসাহ্‌ করবে।
  6. বাম হাত দ্বারা ডান হাত কব্জি পর্যন্ত মাসাহ্‌ করবে।
  7. ডান হাত দ্বারা বাম হাত কব্জি পর্যন্ত মাসাহ্‌ করবে।

📖 বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৫২৮নং

তায়াম্মুম কিসে নষ্ট হয় — টেবিল কার্ড
ফিকহ নোট
তেইয়ামُم

তায়াম্মুম কিসে নষ্ট হয়?

সংক্ষেপে – তায়াম্মুম ওযুর বিকল্প; তাই ওযু নষ্টের কারণগুলো তায়াম্মুমের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এছাড়া, যে অসুবিধার কারণে তায়াম্মুম করা হয়েছিল তা দূর হলেই তায়াম্মুম শেষ।

অবস্থা প্রযোজ্যতা
ওযু নষ্ট হওয়ার কারণ
“যে যে কারণে ওযু নষ্ট হয়, ঠিক সেই সেই কারণে তায়াম্মুমও নষ্ট হয়ে যায়।” ওযুর বিকল্প
অসুবিধা দূর হওয়া
“যে অসুবিধার কারণে তায়াম্মুম করা হয়েছিল, সেই অসুবিধা দূর হয়ে গেলেই তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যায়।”
উদাহরণ: পানি না পাওয়ার কারণে তায়াম্মুম করলে পানি পাওয়ার সাথে সাথে তায়াম্মুম শেষ। অসুখের কারণে করলে, অসুখ দূর হলেই আর তায়াম্মুম থাকে না।
রেফারেন্স: ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ১/৬৩