গোসল কাকে বলে
💧

1: গোসল কাকে বলে?

গোসল আরবী শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো ধৌত করা

শরী'আতের পরিভাষায় গোসল অর্থ হলো — পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে সর্বাঙ্গ ধৌত করা

📖 ইসলামি ফিকহ সূত্র অনুযায়ী সংজ্ঞা
গোসল কত প্রকার

2: গোসল কত প্রকার?

গোসল দুই প্রকার। যথা — ফরযসুন্নাত গোসল

ক. ফরয গোসল
ফরয গোসল বলা হয় ঐ গোসলকে, যা বড় নাপাকি থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য করতে হয়। আর এটা অবশ্য করণীয়।

📖 আল্লাহ তাআলা বলেন:
“তোমরা যখন বড় নাপাক হও তখন গোসল করে পবিত্র হও।” (সূরা মায়িদা ৫:৬)
খ. সুন্নাত গোসল
সুন্নাত গোসল হলো ঐ গোসল, যা করলে সওয়াব হয়, কিন্তু না করলে গোনাহ হয় না।
➤ এ প্রকার গোসলকে মুস্তাহাব গোসলও বলা হয়।
📖 ইসলামি ফিকহ সূত্র অনুযায়ী
[গোসল করার নিয়ম] - ৯৮. সুন্নাহ মোতাবেক গোসল করার নিয়ম কী?

[গোসল করার নিয়ম] 3-. সুন্নাহ মোতাবেক গোসল করার নিয়ম কী?

সুন্নাহ মোতাবেক ধাপে ধাপে

গোসলের ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাব আমলসহ রাসূলুল্লাহ (স) যে পদ্ধতিতে ফরয গোসল করতেন, নিম্নে তা ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলো:

১. নিয়ত করা
প্রথমেই নিয়ত করবে (বুখারী: ১)। মনস্থ করবে যে, উক্ত গোসল বড় নাপাকি থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য এবং তা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য। নাওয়াইতু আন... বা অন্য কোন শব্দ মুখে উচ্চারণ করতে হয় না।
২. বিসমিল্লাহ বলা
অতঃপর (বিসমিল্লাহ) বলবে । (আবু দাউদ: ১০১)।
৩. হাত ধৌত করা।
শুরুতেই দু'হাতের কজি পর্যন্ত ধৌত করে নেবে। হাদীসে এসেছে, (রাসূলুল্লাহ (স)-এর স্ত্রী) মাইমুনাহ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি নবী (স)-এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম এবং একটা কাপড় দিয়ে পর্দা করে দিলাম। তিনি (স) তাঁর দু’হাতের উপর পানি ঢেলে উভয় হাত (কজি পর্যন্ত) ধুয়ে নিলেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান ধৌত করলেন। পরে তাঁর হাত মাটিতে ঘষে নিয়ে ধুয়ে ফেললেন। অতঃপর কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন, মুখমণ্ডল ও দু’হাত (কনুই পর্যন্ত) ধৌত করলেন। তারপর মাথায় পানি ঢাললেনও সমস্ত শরীরে পানি পৌছালেন। এরপর একটু সরে গিয়ে দু’পা ধুয়ে নিলেন। অতঃপর (গা মোছার জন্য) আমি তাকে একটি কাপড় দিলাম । কিন্তু তা নিলেন না। তিনি দু'হাত ঝাড়তে ঝাড়তে চলে গেলেন । (বুখারী: ২৭৬, ইফা: ২৭৩, আধুনিক: ২৬৮)।
৪. লজ্জাস্থান ধৌত করা
দু' হাত ধৌত করার পরের কাজ হলো শুধু বাম হাত দিয়ে লজ্জাস্থান ধুয়ে নেওয়া। এতদসঙ্গে উরুর আশপাশ ও যেখানে যেখানে ময়লা থাকতে পারে সে অংশ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবে। (বুখারী: ২৫৭)।
৫. বাম হাত পরিষ্কার করে ফেলা
অতঃপর বাম হাত মাটিতে বা কোন দেয়ালে ভালো করে মাজাঘষা করে (বা সাবান পানি দিয়ে) উত্তমরূপে ধৌত করে নেবে। (বুখারী: ২৭৪)
৬. ওযূ করা
এরপর নামাযের ওযূর মতো পরিপূর্ণভাবে ওযু করে নেবে। (বুখারী: ২৪৮)।
৭. মাথা ধৌত করা
ওযূর পর ৩ বার মাথায় পানি ঢেলে চুলগুলো ভালো করে ধুয়ে নেবে, যাতে সমস্ত চুলের রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, প্রত্যেক চুলের নিচে নাপাকি রয়েছে। অতএব চুলগুলোকে ভালো করে ধুয়ে নাও’ (হাদীসটি দুর্বল)। প্রথমে পানি ঢালবে মাথার ডান পাশে, এরপর বাম পাশে, অতঃপর মাথার মধ্যখানে । (বুখারী: ২৫৮)

পুরুষদের দাড়ি ও মাথার চুল ভালোভাবে ভেজাতে হবে । একটি চুলও যদি শুকনো থাকে তাহলে এ জন্য দোযখের আগুনে ফেলা হবে (আহমদ ও আবু দাউদ)। এ ভয়ে খলিফা আলী (রা) মাথার চুল কামিয়ে ন্যাড়া করে ফেলতেন *। তবে মহিলাদের শুধু চুলের গোড়া ভেজালেই যথেস্ট (মুসলিম)। তাদের খোঁপা বা বেনি খোলা জরুরি নয়।
৮. শরীর ধৌত করা।
অতঃপর পানি ঢেলে শরীরের সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে দেবে। পানি ঢালবে প্রথমে ডান দিকে, পরে বাম দিকে। আয়েশা (রা) বলেছেন, “নবী (স) জুতা পরা, চুল আঁচড়ানো, পবিত্রতা অর্জন ও অন্যান্য সকল কাজ ডান দিক থেকে শুরু করতে পছন্দ করতেন।” (বুখারী: ১৬৮, ইফা ১৬৪)। কোথাও পানি না পৌছলে তিনি। (স) মাজাঘষা করে পানি পৌছাতেন।
৯. সবশেষে পা ধোয়া এবং ডান দিক থেকে শুরু করা
গোসলের জায়গা থেকে সরে এসে সর্বশেষ দু' পা ধুয়ে নেবে । রাসূলুল্লাহ (স) ফরয গোসলের পর আর ওযূ করতেন না । (তিরমিযী: ১০৭, আবু দাউদ: ২৫০, নাসাঈ: ২৫২, ইবনে মাজাহ: ৫৭৯)
* ইমাম নাবাবী (রহঃ) হাদীসটিকে য‘ঈফ বলেছেন (হাদিসবিডি সংযুক্তি)
রেফারেন্সসমূহ: বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আহমদ; ইফা/আধুনিক উল্লিখিত স্থানে।
গোসলের ফরয কয়টি ও কী কী?

4. গোসলের ফরয কয়টি ও কী কী?

ফরয গোসলের মূল বিধান

গোসলের ফরয তিনটি। যথা—

  • ১. কুলি করা
  • ২. নাকে পানি দেওয়া
  • ৩. সমস্ত শরীর ধৌত করা
মাথার চুল, চুলের গোড়া ও নখ পরিমাণ কোন অংশও শুকনো থাকলে এবং উপরে বর্ণিত কোন একটা কাজ বাদ পড়লে গোসল হবে না।
গোসলের সুন্নাতগুলো কী কী?

5. গোসলের সুন্নাতগুলো কী কী?

সুন্নাহ মোতাবেক করণীয়

গোসলের সুন্নাতগুলো হলো—

  • ১. গোসলের পূর্বে ওযূ করা
  • ২. ময়লা পরিষ্কার করা
  • ৩. মাথায় তিন বার পানি ঢালা
  • ৪. শরীরের বাকি অংশে তিন বার পানি ঢালা
  • ৫. ডান দিক থেকে শুরু করা
এ সুন্নাহসমূহ মেনে গোসল করলে পূর্ণাঙ্গ সুন্নাত মোতাবেক গোসল সম্পন্ন হয়।
গোসল মুস্তাহাব

6. কী কী কাজের পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব?

১. জুমু'আর নামাযের পূর্বে গোসল করা
আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “জুমু'আর দিন” প্রত্যেহ সাবালেগ (মুসলিম নর-নারীর) উপর গোসল করা ওয়াজিব । (বুখারী: ৮৫৮) অনেক ফকীহ জুমু'আর দিনের গোসলকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ বলেছেন, আর যদি কারো গায়ে দুর্গন্ধ থাকে, এ দ্বারা অন্য মুসল্লীর কষ্ট হয়, তবে তার জন্য এ দিনের গোসল ওয়াজিব।
আবু সাঈদ খুদরী (রা) ও আবু হোরায়রা (রা) বর্ণিত অপর এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “যে লোক জুমু'আর দিন গোসল করল, তার কাপড়-চোপড় থেকে সবচেয়ে ভালো পোশাকটি পরিধান করল, তার কাছে থাকলে গায়ে সুগন্ধিও লাগাল, অতঃপর জুমু'আয় হাজির হলো, কারো ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে এগিয়ে গেল না, তারপর ইমাম সাহেবের আগমনের পর থেকে সালাত শেষ করা পর্যন্ত চুপচাপ রইল (অর্থাৎ মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনল), উক্ত ব্যক্তির পূর্ববর্তী জুমুআ থেকে বর্তমান জুমু'আ পর্যন্ত ৭ দিন এবং এতদসঙ্গে আর ৩ দিন যোগ করে মোট দশ দিনের গোনাহখাতা আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেন।” (আবু দাউদ: ৩৪৩)।
আউস ইবনে আউস আস সাকাফী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “জুমু'আর দিন যে ব্যক্তি গোসল করায় (অর্থাৎ সহবাস করে, ফলে স্ত্রী ফরয গোসল করে এবং) নিজেও ফরয গোসল করে । পূর্বাহ্নে মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় কোন কিছুতে আরোহণ করে নয়, ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনে, কোন কিছু নিয়ে তামাশা করে না- ঐ ব্যক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে রয়েছে। বছরব্যাপী রোযা পালন ও পুরো একবছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সাওয়াব।” (আবু দাউদ: ৩৪৫)

রেফারেন্স: বুখারী: ৮৫৮, আবু দাউদ: ৩৪৩, ৩৪৫

২. দুই ঈদের দিন ঈদের নামাযের পূর্বে গোসল করা
এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (স) থেকে সরাসরি কোন হাদীস পাওয়া যায় না। তবে বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা) ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন ।

রেফারেন্স: মুয়াত্তা মালেক- কিতাবুল ঈদাইন: ২

৩. হজ্জ বা উমরার ইহরাম বাঁধার পূর্বে
যায়েদ ইবনে সাবেত (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইহরাম বাঁধার পূর্বে যাবতীয় কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিয়ে গোসল করতেন।”

রেফারেন্স: দারেমী: ১৮০১

৪. মক্কায় প্রবেশের পর তাওয়াফ শুরু করার পূর্বে
হাদীসে এসেছে, “সাহাবী ইবনে উমর (রা) যখনই মক্কায় আগমন করতেন তখন সেখানে তিউয়া (বর্তমানে জারওয়াল) নামক স্থানে রাত্রি যাপন করতেন এবং সকাল হওয়া পর্যন্ত এখানেই অবস্থান। করতেন। অতঃপর গোসল করতেন (তারপর তিনি কাবায় প্রবেশ করতেন)। তিনি উল্লেখ করেন যে, রাসূলুল্লাহ (স) এমনই করতেন।

রেফারেন্স: বুখারী, হজ্জ অধ্যায়: ১৫৭৪

৫. আরাফার দিনে গোসল
“ইমাম বায়হাকী (র) ইমাম শাফেয়ী (র)-এর সূত্র ধরে যাযান নামক একজন তাবেয়ী থেকে বর্ণনা করেন যে, এক লোক আলী (রা)-কে গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে তিনি বললেন, ইচ্ছা করলে তুমি প্রত্যেক দিনই গোসল করতে পার । লোকটি আবার বলল, সেটা আমার উদ্দেশ্য নয়; আমার উদ্দেশ্য বরং ঐ গোসল, যা শরী'আত নির্দেশিত । তখন (আলী [রা]) বললেন, তা হলো- জুমু'আ ও আরাফাতের দিন এবং কুরবানী ও ঈদুল ফিতরের দিন গোসল করা।”

রেফারেন্স: ইবনে আবী শাইবা- ১/৪৩৪

৬. মেয়েদের রোগজনিত কারণে স্রাব হলে
মেয়েদের ইস্তিহাদা অর্থাৎ রোগজনিত কারণে অনিয়মিত স্রাব হলে প্রতি নামাযের পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব। হায়েযের নির্ধারিত পিরিয়ড অতিক্রম হওয়ার পর যে গোসল করবে সেটা হলো ফরয গোসল । তাছাড়া মাসিকের যে নির্ধারিত সময় যেমন প্রতি তিন, চার, পাঁচ বা সাত দিন, যা ব্যক্তি বিশেষের অভ্যাসের উপর নির্ভরশীল। উক্ত সময়ের পরও যদি রক্তস্রাব চলতে থাকে। তাহলে ঐ বর্ধিত সময়কে রোগজনিত সময় বলে ধরা হবে। ঐ সময় প্রতি নামাযের পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব। অথবা প্রতি এক গোসলে যোহর-আছর একত্রে এবং মাগরিব-ইশা একত্রে পড়া জায়েয ।

রেফারেন্স: আবু দাউদ: ২৮৭

৭. ইসলাম গ্রহণের পূর্বে
কোন কাফির মুসলিম হতে চাইলে কালেমা পড়ার আগে ওযু করা মুস্তাহাব। সাহাবী কাইস ইবনে আছেম (রা) বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ (স)-এর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করতে চাইলাম। তিন আমাকে বরই পাতামিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করে আসতে নির্দেশ দিলেন।” (আবু দাউদ: ৩৫৫, নাসাঈ: ১৮৮)। এ গোসলকে কোন কোন ফকীহ ওয়াজিব বলেছেন। তবে শেখ ইবনে বায (রা) এ গোসলকে সুন্নাত বলেই অভিমত দিয়েছেন।

রেফারেন্স: আবু দাউদ: ৩৫৫, নাসাঈ: ১৮৮
গোসল মুস্তাহাব

৭. কী কী কাজের পরে গোসল করা মুস্তাহাব?

১. মৃত ব্যক্তি গোসল দেওয়ার পর
আবু হোরায়রা (রা) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন মাইয়্যেতকে গোসল দেয়, সে যেন এরপর নিজে গোসল করে নেয়।”

রেফারেন্স: আবু দাউদ: ৩১৬১, আহমাদ- ২/২৮০

২. বেহুশ হয়ে গেলে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর
একবার রাসূলুল্লাহ (স) হুঁশ হারিয়ে ফেলেছিলেন। অতঃপর জ্ঞান ফিরে এলে তিনি গোসল করে নিয়েছিলেন ।

রেফারেন্স: বুখারী: ৬৮৭

৩. শিঙ্গা লাগানোর পর
আয়েশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) চারটি কাজে গোসল করতেন,
ক. বড় নাপাক হলে,
খ. জুমু'আর দিনে,
গ. শিঙ্গা লাগালে এবং
ঘ. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিলে।

রেফারেন্স: আবু দাউদ: ৩১৬০
গোসল সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু লজ্জাজনক কথা
মেয়েদের বয়স ১২ বা ১৩ এবং ছেলেদের বয়স ১৫ বা ১৬ বছরে উপনীত হলে তারা তখন বালেগ-বালেগা হয়। তখন তাদের মধ্যে দৈহিক পরিবর্তনসহ কিছু আলামত দেখা দেয় । যেমন, দাড়ি-গোফ উঠা, লজ্জাস্থানে চুল গজানো, মেয়েদের স্তন বৃদ্ধি পাওয়া ও মাসিক ঋতুস্রাব শুরু হওয়া, যৌন অনুভূতির উপলব্ধি ও স্বপ্নদোষ ইত্যাদি আরো অন্যান্য ব্যাপার। এসব বিষয়ে শরীআতের এমন কিছু মাসআলা-মাসাইল জড়িত, যা এ বয়সের প্রত্যেক মুসলিম বালক-বালিকার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোতে কেউ অজ্ঞ থেকে গেলে বড় ধরনের নাপাকীর মধ্যে থেকে যেতে পারে। ফলে তার নামায-রোযা ও অন্যান্য ইবাদত কবুল হবে না। এ থেকে আমাদের নতুন প্রজন্মকে জ্ঞান দেওয়া একটি অপরিহার্য কর্তব্য। যদিও এসব বিষয়ে লেখা বা বলা অনেক ক্ষেত্রেই লজ্জাকর বিষয়। কিন্তু আল্লাহর বিধান মেনে চলার জন্য, হারাম ও অপবিত্রতা থেকে মুসলিম তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীদের হেফাযতের উদ্দেশ্যে একান্ত প্রয়োজন বিধায় এ জাতীয় কিছু মাসআলা এখানে তুলে ধরছি।
গোসল ফরয হওয়ার কারণ

৮. কী কী কারণে গোসল ফরয হয়? - [যেসব কারণে গোসল ফরয হয়]

১. স্ত্রী সহবাস
পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ (খাতনার স্থান পর্যন্ত অংশ- এতটুকু পরিমাণও) যদি স্ত্রী লিঙ্গে প্রবেশ করে তবে পুরুষ-মহিলা দু’জনেরই গোসল ফরয হয়ে যাবে। এমনকি উত্তেজনা ছাড়া বা বীর্যপাত না হলেও। হাদীসে এও আছে যে, পুরুসের লিঙ্গ স্ত্রীলিঙ্গের সাথে একত্রিত হলেই গোসল ফরয হয়ে যায়।

রেফারেন্স: মুসলিম: ৩৪৯, বুখারী: ২৯১

২. স্বপ্নদোষ
স্বপ্নযোগে যদি কোন নারী-পুরুষের সহবাস হয় বা এ জাতীয় ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত হয় তবে এটাকে স্বপ্নদোষ বলা হয়। জাগ্রত হওয়ার পর যদি কাপড়ে মনি দেখতে পায় অর্থাৎ কাপড় ভেজা মনে হয় তাহলে গোসল ফরয হয়ে যায়। আর মনি পাওয়া না গেলে গোসল ফরয হয় না।

রেফারেন্স: বুখারী: ২৮২

৩. মনি নির্গত হওয়া
যেকোন কারণেই হোক যদি বীর্যপাত হয় তাহলে গোসল ফরয হবে। বৈধ-অবৈধ যেকোন পন্থায়ই হোক। যদি সাদা গাঢ় পানি বের হয় কিন্তু উত্তেজনার সাথে নয়, আর সে সাবালেগও নয়, তাহলে এটা রোগ। সে ক্ষেত্রে শুধু লিঙ্গ ধুয়ে ওযু করলেই যথেষ্ট।

রেফারেন্স: আবু দাউদ: ২০৬

৪. হায়েয-নিফাসের রক্ত বন্ধ হওয়া
হায়েয (মাসিক) ও নিফাস (সন্তান প্রসব পরবর্তী রক্তস্রাব) যখন বন্ধ হবে তখন গোসল ফরয হয়ে যায়।

রেফারেন্স: বুখারী: ৩২০

৫. মৃত্যু
কোন মুসলমান মারা গেলে তাকে গোসল দেওয়া জীবিতদের উপর ফরয। তবে শহীদের জন্য গোসল ফরয নয়।

রেফারেন্স: বুখারী: ১২৬৬